Wellcome to National Portal

আপনাকে স্বাগতম বেলাব উপজেলার তথ্য বাতায়নে

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
শাহ্ ইরানীর (রহ:) মাজার শরীফ
বিস্তারিত

ভূমিকা: হযরত শাহ ইরানী (রহ:) সম্পর্কে সঠিক সন্ধান না পেলেও এটা নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস যোগ্য যে, ইরান, তেহরান, পারস্য, ইয়েমান, কান্দাহার, কাবুল, মিশর, তুর্কি প্রভৃতি  এলাকার সাধকগন হযরত শাহজালালের সঙ্গী হিসেবে ধর্ম প্রচারে পূর্বাঞ্চলে এসেছেন। দিল্লীর প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল তাপসকুল শিরোমনি নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরবার হয়ে তাঁরা সৈয়দ নাসির উদ্দিনের সাথে সিলেট ও হবিগঞ্জ সাবেক তরফ নগরী অভিযানে আসেন। কাফেলাতে বিভিন্ন রাজ পরিবারের সদস্যবর্গ ছিলেন। ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, ধর্মপ্রচারের নেশা ও মুসলমানদেরকে অত্যাচারী রাজাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁরা জেহাদ ঘোষনা করেছিলেন। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ধর্ম সম্রাট এদেরই একজন। তিনি ইরান রাজ পরিবারের তখন সদস্য তার বয়স প্রায় ৪০ উর্ধ্ব ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম জানা যায় নাই। তবে শাহ ইরান অর্থাৎ ইরানের অধিবাসী এবং ধর্মীয় সম্রাট হিসেবেই এনামের সৃষ্টি। স্থানীয় লোকেরা শাহ ইরানী বলে ডাকেন।

১৩০৩ সালে সিলেট ও এর পরের সৎসর তরফনগরী বিজয়ের পর এই গুলিয়ে সম্রাট তাঁর দলীয় নেতা ও পীর হযরত শাহজালালের নির্দেশে লাল মাটি অঞ্চলের (সাবেক দোয়েব অঞ্চল) অত্যাচারী রাজা বিজয় মিশ্র; অসম রাজার রাজ্যে আগমন করেন। সুদর্শন, ফার্সী ভাষাভাষীর এ যুব রাজ সকল কিছু জয় করেই বর্তমান “দরগাহ শরীফ শরীফ” ও তাঁর পার্শ্ববর্তী উচুঁ লাল মাটি? এলাকায় ইসলামের বানী প্রচার করেছেন। তাঁর তিরোধান কালের সঠিক তথ্য নাই, তবে তিনি নি:সন্তান ছিলেন এবং স্থানীয় রাজ কুমারীকে বা কোন জমিদার কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। এটা তাঁর সুবিশাল দিঘী এবং এর নাম করণ থেকেই বুঝা যায়।

১৩৫০ সালের দিকে প্রায় অশিতিপর অবস্থায় এই মহান সাধক ইন্তেকাল করেছেন বলে অনুমেয়। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমাতে বাৎসরিক ওয়াফাত দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। হালে প্রতি বৃহস্পতিবার রজনীতেই অগনিত ভক্তবৃন্দের সমাগম হচ্ছে। একই থানার বটেশ্বর, উয়ারী, চন্ডিপাড়া, প্রভৃতি এলাকার ভোগলিক নানা নিদর্শনের এ মাজারের মিল। অর্থাৎ ঐ সকল এলাকার অত্যাচারী রাজাদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছেন এবং তিনি ধর্ম প্রচার করেছেন এটাই ধারণা। এমাজার/দরগাহ শরীফ নরসিংদীর অতি প্রাচীন ও অতীত ইতিহাসের স্বাক্ষী এতে কোন দ্বিমত নাই।

পবিত্র ওরস শরীফ: প্রতি বৎসর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা রজনীতে পবিত্র ওরস শরীফ হয়ে আসছে।

দরগাহ শরীফের বিবরণ: মাজারটির অবস্থান স্থলের চারিদিকে স্থানীয় মাপে ৬৩ কানি জমি ওয়াকফে এষ্টেট, বাংলাদেশ সরকারের নামে বর্তমানে তালিকাভুক্ত। মাজারটির সাথেই পূর্ব পাশে সুবিশাল এক দিঘী রয়েছে। ইহা বৃহত্তর ঢাকার পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দিঘী বলে খ্যাত। ইহা ১৯৭৮-৭৯ সালে পুন: খনন করা হয়। এই দিঘীর রয়েছে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাবী। যেমন: ধর্ম পুরুষ ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক ব্যাক্তিত্ব ইহা তৎকালীন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়গণও জ্ঞাত ছিলেন। রামনারায়ন নামক এক জমিদার ছিলেন (বর্তমান রামপুর গ্রামে) এবং তার ছিলেন এক ছেলে। ছেলেটির অবস্থা মোঘল সম্রাট বাবর ও হুমায়ুনের মতই হয়েছিল। অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করে দেওয়ার পর রাজা তার লোকবল দিয়ে এখানে খনন করেদিয়েছেন এই ঐতিহাসিক দিঘী। এবং তিনি ইসলাম গ্রহন করেন ও তার একমাত্র কন্যা মহারানীকে উনার সাথে দেন। ঘটনাটি অনেকাংশে অনুমান করা যায় দিঘীটির অতীত কালের রেকর্ড থেকে। সি,এস রেকর্ডে এটাকে মহারানীর দিঘী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই ধর্মপ্রাণ পীর সাহেব, অলিয়ে কামেল ধর্ম সম্রাট এর নাম সঠিক জানা যায়নি। তবে উনি ইরানের অধিবাসী ছিলেন এমন কিছূ তথ্যাদি পাওয়া গিয়াছে।

তাছাড়া ধর্মীয় নেতাদেরকে শাহ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সেহেতু ইরান এর সাথে শাহ সংযুক্ত হয়ে শাহ ইরান করা হয়েছে স্থানীয় জনগণ শাহরাণী বলে থাকে। এর কারণ তাঁর স্ত্রী যেহেতু রাণী ছিলেন তাই শাহ রানী। মাজারটিতে রয়েছে পাশাপাশি দুটি কবর। জনগণ এই দুটোকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে দেখে থাকেন। মাজারটির নক্সা নমুনা ইত্যাদি সবই সুলতানী আমলের। প্রত্মতত্ত্ববিদগণের ধারনা এটি ৫/৬শত বৎসরের পূর্বেকার স্থাপত্য। সম্প্রতিকালে একই উপজেলার উয়ারী বটেশ্বর এলাকা থেকে সুলতানী আমলের মুদ্রা ও উদ্ধার করা হয়েছে। যা বর্তমানে যাদুঘরে আছে। এই মাজারের সামনে কয়েকটি রক্ষিত পাথর ও খিলান এর স্থাপত্য নক্সা ও ছাপ নি:সন্দেহে প্রাচীন কালের স্বাক্ষর  বহন করে।

এই পাথরগুলি সম্পর্কে জনগণের মাঝে রয়েছে দারুন ভয়, ভীতি ও উৎকন্ঠা। কারণ এগুলোর ছায়াতে পা লাগলে নাকি নানা ধরনের রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে। কয়েক মাইল ব্যাপী জনসাধারণ গাভীর প্রথম দুধ দিয়ে এগুলোকে ধৌত করে থাকে। তাদের ধারণা পশু রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাবে এবং গাভী বেশী করে দুধ দিবে। এখানে প্রতিদিন আসে বিভিন্ন মানত নিয়ে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ। সকল ধর্মের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে এই মাজার সম্পর্কে রয়েছে অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস। কয়েক শতাব্দির স্বাক্ষী হয়ে কিছু দিন পূর্ব পর্যন্ত দন্ডায়মান ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় বট বৃক্ষটি।

১৯৮৯ সালে এক ঝড়ে তা ভেঙ্গে যায়। দিঘী থেকে জনগণ নাকি আগে চাওয়া মাত্র তাদের ব্যবহারের বিভিন্ন তৈজসপত্রাদি পেত। এক কুচক্রি মহলের কারণে এখন নাকি বন্দ। এগুলো সবই লোকজ কাহিনী। মাজারের দিঘীতে ছিল বিভিন্ন বড় বড় জাতের গজার মাছ ও কাছিম। এগুলো নাকি পীর সাহেবের কেরামতিরই ফল। ১৯৭৯ সালে দিঘীটি পূন:খননের সময় একটি কাছিম পাওয়া গিয়াছিল যা সত্যিই বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় বলে দাবী রাখে। কাছিমটি উপরে উঠিয়ে সাত/আট হাত গর্ত করে চারিদিকে বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছিল এটি। দিঘী খনন কাজ সমাপ্তির পর এর বেড়া খুলে দিয়ে কাছিমটি ইচ্ছা করেই পশ্চিম দিকের খালে চলে যায়।